কয়েক শতাব্দি ধরে পরিত্যক্ত থাকা জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার পাঠানপাড়ায় মসজিদে পুনরায় আজান ও নামাজ শুরু হয়েছে। শতাধিক বছর পর হলেও আপন পরিচয়ে ফিরেছে মসজিদটি।
গত মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) স্থানীয় আলেম ড. ইকলিমুর রেজার আজান-ইকামত ও জামিয়া ইসলামিয়া আজিজিয়া আনওয়ারুল উলুম (হিলি) মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা শামছুল হুদা খানের ইমামতিতে জোহরের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে পুনরায় পরিত্যক্ত এ মসজিদে আজান ও নামাজ চালু হয়। এ সময় স্থানীয় মান্যবর ব্যক্তি, আলেম-উলামা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিতি ছিলেন।
পাঠানপাড়ায় পরিত্যক্ত এ মসজিদটি আবাদের মূল উদ্যোক্তা ড. ইকলিমুর রেজা। এখন মসজিদ ও আশ-পাশের জমিজমা মালিকানা তার বাবা-চাচাদের মালিকানায় রয়েছে।কয়েকশ বছর আগে থেকে মসজিদের আশপাশে হিন্দুদের বসতি গড়ে উঠে। মসজিদটিও হিন্দুদের মালিকানায় চলে যায়। ১৯৭২ সালে তাঁর বাবা ও বড় চাচা হিন্দু মালিকদের কাছ থেকে পাঁচ একরের মতো ভূমি কিনে নেন।
তারপর থেকে এ মসজিদটিও মুসলিমদের মালিকানায় চলে আসে। কিন্তু গত প্রায় ৫০ বছর ধরেও মসজিদটিতে নামাজের উদ্যোগ নেয়নি কেউ।তবে ব্রিটিশ আমল থেকে ভূমির কিছু অংশ মসজিদ হিসেবে চিহ্নিত ছিল বলে জানা যায়। তখন ভূমি অফিসের দায়িত্বশীলরা তাদেরকে মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক এবং অবশিষ্ট ভূমির মালিকানা প্রদান করে দলিল করে দেন।হাজার বছরের পুরনো মসজিদটির অবকাঠামো প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ৭শত বছর পরিত্যক্ত থাকায় এটির ইটের গাথুনি খুলে খুলে পড়ছে।
ধ্বংসপ্রায় মসজিদটির আঙ্গিনায় সামিয়ানা টানিয়ে গত মঙ্গলবার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় মুসল্লিরা নামাজ পড়েছেন।উপজেলার পাঠানপাড়ায় অবস্থিত মসজিদটি শত শত বছর ধরে পরিত্যক্ত ছিল। স্থানীয়দের ধারণা, প্রায় হাজার বছর আগে সুলতানি আমলে নির্মিত এ মসজিদ। মসজিদটির সামনে রয়েছে সান বাধানো পাকা ঘাট এবং প্রাচীন পুকুর। যা দেখে সহজেই অনুমান করা যায় যে, এখানে হয়তো কোনো নগরের অস্থিত্ব ছিল।
মসজিদে আজান ও নামাজের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় আলেম ড. ইকলিমুর রেজা ও দাঈ মুফতি জোবায়ের। তাদের কণ্ঠেই প্রথম ধ্বনিত হয় আল্লাহু আকবার ধ্বনি। শুরু হয় নামাজ। পরিত্যক্ত থাকা ঐতিহাসিক এ মসজিদে আজান ও নামাজ শুরু হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে খুশির আমেজ তৈরি হয়েছে। অনেককেই আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আনন্দে বলতে থাকেন, দীর্ঘ দিন পর হলেও আপন পরিচয়ে ফিরেছে পাঠানপাড়ার এ মসজিদ।
উল্লেখ্য, ড. একলিমুর রেজাসহ স্থানীয়রা সেখানে একটি ইসলামিক কমপ্লেক্স করতে চায়। তাই গত মঙ্গলবার মসজিদের সঙ্গে একটি মাদরাসাও উদ্বোধন হয়েছে। এ ইসলামিক কমপ্লেক্সে থাকবে মসজিদ, মাদরাসা, গণপাঠাগারসহ একাধিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান।